মাহমুদুল সুমন
ভিখারীও জেনে গেছে, এই সময় ভিক্ষা চাইতে হলে দূর থেকে দাড়িয়ে চাইতে হবে। কিন্তু এও সত্য হু এর গাইড লাইন মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত সমাজের মনে যতটানা ধরেছে, ততটা মনে ধরিয়ে চলতে পারেনি খেটে খাওয়া মানুষেরা। তাঁরা এখনও রাস্তায় নানা কারণেই। ক্ষুধার থেকে বেশী জ্বালাময় নিশ্চয়ই করোনা নয়। এটা যেন খেটে খাওয়া মানুষ বুঝে গেছে!
রাস্তায় আজকে বিক্ষিপ্তভাবে নিম্ন আয়ের মানুষদের দেখলাম। যারা আছেন রাস্তায়, তারা জীবিকার প্রয়োজনেই আছেন। কিছু জায়গায় দেখলাম ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। মানুষের জটলা কোথাও একটু বেশী। কোথাও আবার ছক কেটে মানুষ দাঁড়িয়েছে স্বল্পমূল্যে চাল কিনবার জন্য। শহরটায় মানুষ কমে গেছে। মানুষের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ! অনেকের মুখেই মাস্ক!
করোনা সংক্রমণ রোধে প্রয়োজনীয় দূরত্ব রক্ষা করে চলবার এই ব্যবস্থা ভোগাচ্ছে খুব। বনানীতে কাজ শেষে ফিরতে যেয়ে কয়েকজন সাহায্যপ্রার্থীকে কিছু দিতে যেয়ে একটু কাছাকাছি চলে আসলে আলামীনই আমাকে সতর্ক করলো: বেশী কাছে আসতে দিয়েন না …। মনের ভিতর একটা অস্বস্তি কাজ করছে। কেমন কাস্টের মত শোনালো কথাটা।
কোভিড ১৯ নতুন ধরনের আদারিং এর জন্ম দিচ্ছে। এরকম খবর পাচ্ছি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমগুলোতে [এই বিষয়ে আরো দেখুন ]। কোন বাসায় বা এলাকায় রোগী পাওয়া গেলে যেভাবে লকডাউন লিখে বা বাঁশ পুতে রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছে সরকারী সংস্থাগুলো (বা এলাকাবাসীরাও), তা এই আদারিংকেই উস্কে দিচ্ছে বলে মনে হয়। আমাদের এলাকাতেই না কি এক লোক করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ভেবে এলাকা থেকে পালিয়েছেন বলে শুনেছে আমারই একজন পরিচিতজন। তবে এসবই গুজব হতে পারে বলে তার মত। বাসার কাছের কাঁচা বাজার থেকে যেমন একজন শুনে এসে বলল কাছে পিঠেই তিনজন ‘রোগী পড়ছে’। খবরের সাইট ঘেটে অবশ্য বোঝা গেলনা কী ঘটেছে।
খালি রাস্তা। এয়ারপোর্ট রোড। একটা শর্ট কাট ইয়ু টার্ন নেয়া আমাদের আলামীনের অনেক দিনের বাসনা। আমি নিয়ম বিরুদ্ধ বলে সবসময় মানা করি। আজকে রাস্তা খালি পেয়ে আর কাছে পিঠে পুলিশ না দেখতে পেয়ে আমার অনুমতি ছাড়াই আলামীন ঘুরিয়ে ফেলল গাড়ী। কভিড ১৯ আলামীনকে এই ক্ষমতা দিয়েছে। ওর গতিবিধি দেখে আমি শুধু বললাম: আজকে শখ পূরণ হয়েছে আলামীনের। মাস্কের আড়ালে আমার কথায় ও হাসলো কি না বোঝা গেলো না!
মাহমুদুল সুমন, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।