মির্জা তাসলিমা সুলতানা
সকল সৃজনশীলতা নিয়ে কলম, কি বোর্ড বন্ধ করে বসে আছি। “আমি যার জন্য দায়ী নই, বা যা আমার হাতে নেই তার জন্য অপরাধী/দোষী হওয়ার কিছু নেই”- এই তুষ্টবাদী নিও-লিব্যারাল মর্ম বাণীতেই ঠাই নিতে ক্রমাগত ঠেলে দেওয়া হচ্ছে! জানি নিরুপায় উপলব্ধি থেকে উদ্ধার পেতে ব্যক্তিগত আরাম আয়েশের চৌহদ্দির মধ্যে ঢুকে পড়াই শ্রেয়। নইলে আমার ইমিউন ব্যবস্থা আমাকে প্রতারিত করবে কিংবা নির্ঘুম রাতের অশান্তিতে বদহজম হবে।
এইসব এড়াতে বরং ব্যক্তিগত গাড়িতে একটু লং ড্রাইভে যাই! কিংবা ওভেনে কেক পিৎজা বেইক করি। নিদেন পক্ষে ইউটিউবের সাহায্য নিয়ে জিলিপির নিখুঁত প্যাচ দেওয়ায় মনোনিবেশ করি! কী বলেন? বাটলার, চমস্কি, অখিল গুপ্ত বা হারভির সাহায্য নিয়ে পরে না হয় বিশদ গবেষণা করে দেখানো যাবে কীভাবে গরীবি পুন:উৎপাদন করা হয়েছিলো। কিংবা মহামারির কালে ধনী তৈরিতে কী কী বাগাড়ম্বর প্রচার হয়েছিলো!
এইকালে মাঝে মাঝে দু একটা ওয়েবিনারে যোগও দেওয়া যায়! চিবিয়ে চিবিয়ে ব্যবস্থার কিছু ফাঁক ফোকর ধনাত্বক ভঙ্গিতে মুন্সিয়ানার সাথে উচ্চারণ করা যায়। কিন্তু এমনভাবে যাতে সাধারণের কাছে মনে হয় “বুঝলাম কিন্তু ঠিক বুঝলাম না!” নেংটা রাজা (রানী)দের নর্তন কুর্দন স্পষ্ট দেখবো বুঝবো, কিন্তু সেসব সাধারণের বোধগম্য করে উচ্চারণ করলেই বানানো এই আইন সেই আইনের উসিলায় ধরে নিয়ে যাবে, কিংবা ধরে নেওয়ার হুমকি জারি রাখা হবে। নিকট অতীতে সেসব হুমকিধামকি কি ঘর পর্যন্ত আসতে আমরা দেখিনি?
তার চেয়ে ‘সারভাইভেল অব দা ফিটেস্ট’ মেনে নিয়ে পাশ ফিরে থাকাদের দলে যোগ দিতে বাধ্য হই, তাদের জন্য তালিয়া বাজিয়ে স্ট্যাটাস কো সমুন্নত রাখি! আর বেশী অসহ্য হলে এইখানে দু’চার কথা ইনিয়ে বিনিয়ে বলবো না হয়!
মির্জা তাসলিমা সুলতানা অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাবি।