দিলশাদ সিদ্দিকা স্বাতি
ঈদের “সাধারণ ছুটি” তে মানুষের বাড়িতে যাওয়ার ভীড় দেইখা কান্দি কেন আমরা?
এপ্রিলের মাঝামাঝি উনাদের যে পায়ে হাঁটায়ে ঢাকা/গাজীপুর নিয়া আসা হইছিল; ৩০শে এপ্রিলের পরে যে গার্মেন্টস সেক্টর বন্ধই করা যায় নাই পুরাপুরি! সেইটা কি ভুইলা গেলাম এক্কেরে?
তারপর থেইকাই যে প্রায় সকল সেক্টরগুলা, বাজার-সদাই-মার্কেট ইত্যাদি খুইল্যা দেওয়ার আবেদন জানাইতে থাকলো আর আমরা খালি মরীয়া হইয়া পাব্লিকদিগেরে (কোথাও কোথাও মাইকিং কইরা শুধু মহিলাদেরকে যাইতে মানা করা হইছে) শপিং এ যাইতে না করতে থাকলাম কিংবা মশকারি অথবা গাইল্যাইতে লাগলাম- ভুইল্যা গেলাম?
পাব্লিক পরিবহন বন্ধ হইয়াও আবার বন্ধ না! আবার নাকি কাইল্কা/পরশু থেইকা এক্কেবারে বন্ধ- এইগুলা কি আচানক কোন ঘটনা? সামরিকবাহিনী যে মাঠে ছিল তখনো। কিংবা বিগত বেশ কিছুদিনে, তাদেরকে প্রত্যাহার করে নেয়ার কোন সংবাদ পাইছি কেউ? কবে পাইলাম? তো যারা যারা এইসকল ঘটনাসমূহ আতঁকা বিস্মৃত হইয়া গিয়া ছুটিতে বাড়িতে যাওনের ভীড় দেইখা ফেসবুকে বিলাপ পাড়েন, তখন কেমুন জানি আজিব লাগে!
ঘরবন্দী থাকার মূল উদ্দ্যেশ্য যেইটা ছিল – মানুষ কম বাইর হবে আর সেই ফাঁকে হাসপাতাল, চিকিৎসা ব্যবস্থারে বিশেষভাবে ডিজাইন করা বা পুরাপুরি নাহোক, যেটুকু আছে- সেটারেই অন্তত শক্ত কইরা ধইরা রাখা – সেইটা কদ্দুর হইছে? খোঁজ নিছি?
সেই অবসরে, খাদ্য সাহায্য বা অন্যান্য সাহায্য দেওনের যে সরকারী ব্যবস্থা হইছিল, তার পরিণতি ফাইনালি কি হইতে লাগলো? প্রায় শতভাগ চোর-চোট্টা, বাটপাড়, লোভী, নিজের স্বার্থ আর ব্যবসায়িক, প্রাতিষ্ঠানিক মুনাফায় অন্ধ (পদস্থ কিংবা অপদস্থ, পদার্থ এবং অপদার্থ কর্তা-পাব্লিক সহ) এই দেশের যে সেট-আপ সেইটা রাতারাতি ক্যাম্নে বদলায়? এই ব্যবস্থায় সব’চে ভালো আর কি কি হইতে পারতো? পৃথিবীতে কি এখন কেবল করোনা ভাইরাসই চলাফেরা করতাছে, আর সব জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসগুলা কি ‘না-ই’ হইয়া গেছে?
মেডিকেল সেক্টরে যারা এক্টিভ আছেন, যারা সেবা দিয়া যাচ্ছেন তো যাচ্ছেনই, তারা শুরু থেকে দিয়ে যাচ্ছেন। তারা এক মুহূর্তর জন্যও পিছু হটেন নাই। কিন্তু বিশাল এক অসুস্থ জনগোষ্ঠীর জন্য আসলে তাদের সীমা কতটুকু? তাদের শক্তি, সক্ষমতা বা শুধু যদি এই তাদের শারিরীক, মানসিক এনার্জি লেভেলের কথাও ভাবি! নাকি তারা ‘অসুর’ গোছের কেউ? তাদের ফ্যামিলি নাই?
কিন্তু যারা পিছায়া ছিলেন, প্রাইভেট প্র্যাকটিশিনার ডাক্তাররা এবং বিগ বিগ কর্পোরেট হাসপাতালগুলা, তারা এইসব করার আগে একবারও ভাবছিলেন, লাগাতার সেবা দেয়া ডাক্তার/নার্স-কর্মীদেরও সীমা আছে একটা। এই সিস্টেম কলাপ্স করতে বাধ্য একসময়। এবং, আসলে কলাপ্স হইয়াই আছে।
সাধারণ ডেথ রেট কত ছিল আগে বাংলাদেশে? বাকিগুলার হিসাব কই?
মানুষ কতজন কোভিডে মরতেছে আর কতজন সাধারণ অসুখে চিকিৎসা না পেয়ে, হিসাব কেউ করতে পারবে?
ইংরাজি সেই ‘আমার জুতা যদি পায়ে দিতেন’ প্রবাদটা এখন খুব চালু হইছে। আচ্ছা বেশ – যার ঘরে একবেলা খাবার কেনার টাকাই নাই, যাদের ঘরে একগাদা মানুষ অথবা যার এক মাসের বেতনের উপ্রে পুরা পরিবার নির্ভরশীল- তাদের জুতা বা স্যান্ডেল-খানা কেমন পায়ে দেয়ার সাহস করতে পারি কেউ? আরও দুঃখের বিষয় উনাদের সেই স্যান্ডেলখানাও বড্ড ছিঁড়াই। আমার-আপ্নার ঠ্যাংগে ঢুকিবে না তা। তাদেরে সাহায্য তো অনেক করতে চাওয়া হইছে- আমার ধারণা এমনকি সরকারি তরফ থেইকাও আন্তরিকভাবেই। পরিস্থিতি কি হইছে, কই গেছে সবাই জানি।
তো এইসব প্রশ্ন, মাথায় ঘুরপাক খায়। দেখি, শুনি, ভাবি আর তারপরে আইজকাল চুপ কইরা থাকি। এইগুলা আমার সেই পুরান ভাষায় আবিল্লি! এইসব আবিল্লি, একলা একলা আন্ধার ঘরে প্যাঁচাল পাড়ার মতো। কথা কারুর কাছে পৌঁছায় কি? যাদের কথা পৌঁছায় তারা আবার কি সুন্দর কইরা সুড়সুড় কইরা জেলখানাতেও পৌঁছায়া যায়!
ফেসবুকে অন্যদের আবিল্লিতে মাঝেমধ্যে বেশি বিরক্ত হইয়া গেলে নিজের এইসব ‘আবিল্লি’ লেখি। অবসরে, ফাঁকে-ঝোকে। আমার এইসব জ্ঞানী জ্ঞানী আলাপে যারা মুখ বেঁকাইয়া কইবেন, তো তুমি লেখো ক্যান? জ্ঞান বেশি হইছে, ঝনঝন করে?
কৈফিয়ত দেই- লিখে রাখি, সাক্ষী দেই, আমানত হিসাবে আমার নিজের।
কিন্তু সত্য কথা কি জানেন? আজাইরা আবিল্লি, গোড়া না দেইখা আগায় খালি পানি ঢালতে চাওয়া কিংবা করোনাকালীন পরিস্থিতি ইউজ কইরা নিজেরে হাইলাইট করতে চাওয়ার প্রবণতা (যা আসলে নিকট ভবিষ্যতের ধান্ধাবাজি আমার মতে) এইসব দেখে দেখে মেজাজ খারাপ হয় মাঝেমধ্যে। বিরক্তি কমে না। কেউ কারোর কথা শুনে না, পড়ে না- দেখেও না।
Image courtesy: author
দিলশাদ সিদ্দিকা স্বাতি কনজ্যুমার রিসার্চার ও ইনসাইট স্পেশালিষ্ট। দুই বাচ্চার মা।
0 Shares

Leave A Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

6 + 15 =