মাহমুদুল সুমন
গফম্যানের (১৯২২-৮২) পুরো আলোচনাই ড্রামাটারলজি তত্ত্ব, বিশেষ করে ফ্রন্ট স্টেইজ, ব্যাক স্টেইজ এবং অফ স্টেজ এর মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে গড়ে উঠেছে। মুখোমুখি সম্পর্কে আমরা আসলে পারফর্মেন্স করি। এখানে সত্যিকারের আমি বা true self বলে কিছু নেই। আমরা স্রেফ একটা একসপ্রেসিভ অর্ডার মেইনটেইন করি। অভিনয় শিল্পের উপমা ব্যবহার করে গফম্যান বলেন, জীবন নাটকের মত, আমরা এখানে নানা ভূমিকা পালন (রোল প্লে) করি।
সেই অর্থে জীবনও একটা ফিকশান মানে নাটক!
মুখোমুখি সম্পর্ক নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যেয়ে গফম্যান এইসব প্রসঙ্গ টানেন। অনেকে এটাকে হ্যাকি স্যাকি’র (আমেরিকায় প্রচলিত একটি খেলা) সাথে তুলনা করে বলেন যে, মুখোমুখি যোগাযোগের ক্ষেত্রে সমাজবদ্ধ জীব হিসাবে আমাদের কাজ হচ্ছে হ্যাকি স্যাকি খেলার মত স্যাকটাকে সবসময় বাতাসে উচিয়ে রাখা এবং মাটিতে পড়তে না দেয়া। এটাই খেলাটার নিয়ম। কিন্তু কখনও কখনও স্যাকটা মাটিতে পড়ে যেতে পারে এবং পড়ে যায়। সেক্ষেত্রে একটু লজ্জাজনক পরিস্থিতি হতে পারে, যে রাখতে পারলোনা বা যার কারণে বস্তাটা পড়ে গেল, উভয়েরই!
তবে এরকম অবস্থায় স্যাকটি উঠিয়ে আবারো খেলতে শুরু করাই কাজ। জীবনটাও তাই। খেলতে খেলতে বলটা মাটিতে পড়ে যাওয়া মানেই অর্থ-ব্যবস্থাটি ভেঙ্গে যাওয়া। অনেক সময় দেখা যায় যে, কেউ কেউ এই এক্সপ্রেসিভ অর্ডারটাকে মানতে চায়না। নিয়মিত যদি কেউ এই কাজ করতে শুরু করে, তবে বুঝতে হবে সেই ব্যক্তি খেলার নিয়ম মানতে আগ্রহী নয় এবং খেলাটায় তার কোন দায়বদ্ধতা নেই। তখন সেই মানুষকে আর মানুষ নিরাপদ মনে করে না। ব্যক্তিগত জীবনেও দেখেছি, মুখোমুখি সম্পর্কের ভেতর সহিংস আচরণ করবার ফলে গুনী মানুষও নিজ সম্পর্ক সূত্রে আর ফিরে আসতে পারে নি।
মনে রাখতে হবে আমরা তাদের সাথেই সখ্য বোধ করি এবং নিরাপদ বোধ করি যারা পারস্পরিক সহমর্মিতা ও শ্রদ্ধার ভূমিকাটি নিবারণ করতে পারে বা হ্যাকি স্যাকি খেলাটা ভাল খেলতে পারে! যখন সেই চাহিদা কেউ মেটায়না, তখন বুঝতে হবে সেই ব্যক্তি তোয়াক্কা করে না এবং সম্পর্কের প্রতিও তার নেই কোন দায়বদ্ধতা নেই। true self বলে কিছু নেই। আসুন আমরা হ্যাকি স্যকি খেলতে শুরু করি আবার!
মাহমুদুল সুমন অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।