ফাহমিদ আল জায়িদ
আমার জানালা দিয়ে ন্যাড়া এই গাছটির দিকে তাকালেই ও হেনরী’র বিখ্যাত ‘দ্যা লাস্ট লিফ’ গল্পের কথা মনে হয়। বলিউড ‘লুটেরা’ মুভি বানিয়েছিল এই গল্পের পটভূমিতে। স্বপ্ন একজন মৃতপ্রায় মানুষকেও বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম। আহারে, স্বপ্ন!
ছবি: ফাহমিদ আল জায়িদ
আজ ফেলানী হত্যার এক দশক। সেদিন ক্লাসে বলছিলাম বিশ্বায়নের ‘সেন্টার-পেরিফিরি’ নিয়ে। এই ‘ডুয়ালিজম’ এখন আর হালে পানি পায় না। আমরা এখন সবাই বুঝে গেছি, ‘কেন্দ্র’ আর শুধুমাত্র পশ্চিমে নাই, এখানেই নতুন নতুন কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশ, ভূটান, নেপাল, শ্রীলংকা, মায়ানমার- এদের জন্য ‘কেন্দ্র’ হচ্ছে এখন ভারত অথবা চীন। আমার আফগান বন্ধু মুনসুরের এই দাবী আমাকে খুব টানে, সে সব সময়ই বলে, “আফগানিস্থানের আসল সমস্যা না তালেবান, না পশ্চিম। আমাদের প্রধানতম সমস্যা হচ্ছে পাকিস্থান (মিলিটারী)।” ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাজাকারদের নিয়ে পাকিস্থানী মিলিটারীরা বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করছিলো- মুনসুরের মুখে সেই ইতিহাসের কথা শুনে আমি তাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম প্রথম যেদিন পরিচয় হয়েছিল ওর সাথে। মুনসুর জানে সেই ইতিহাস! আমি মুনসুরকে কথা দিয়েছি, সৈয়দ মুজতবা আলীর দেখা আফগানিস্থানের গল্প আমিও তাকে শোনাবো একদিন।
সেদিন ইথিওপিয়ার এক অধ্যাপক বলছিলেন, চীন কিভাবে তাঁর পুঁজি দক্ষিণপূর্ব এশিয়াতে বিস্তার করেছে। আমার জার্মান বন্ধু উনাকে ধরে ফেললো, আপনার নিজের মহাদেশ আফ্রিকাতে চীন যা করছে, সেটি নিয়ে আপনি কি ভাবছেন? চীনের পুঁজির এই ‘spatial fix’ আপনার ভালো লাগছে, নাকি খারাপ? আমিও সাথে যোগ করলাম , ‘প্লিজ বলবেন না যে আফ্রিকাতে চীনের ‘নব্য-উপনিবেশবাদ’ হচ্ছে পশ্চিমাদের প্রোপাগান্ডা’!
‘পুঁজিবাদের জন্য উদারনৈতিক গনতান্ত্রিক শাসন পদ্ধতি আবশ্যক’- রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের এই পুরানো দাবীকে মিথ্যা প্রমাণ করে চীন এখন বিশ্বের বড় পুঁজিবাদী দেশে পরিণত হইছে। “মার্কস, মাও অ্যান্ড মার্কেট” – শুনতে খুব শ্রতি মধুর লাগে বটে!
যদিও নৃবিজ্ঞানীরা ‘প্রাত্যহিক জীবন’ নিয়েই বেশি আগ্রহী থাকেন, কিন্তু ইদানীং ‘ক্রাইসিস’ খুব ভাবাচ্ছে। যদিও প্রাত্যহিক জীবনে মানুষ ‘ক্রাইসিস’ বয়ে নিয়ে চলে। ‘ক্রাইসিস’ জমতে জমতে ‘ক্যাটাসট্রফি’ ঘটে যায়। ‘ক্রাইসিস’ একটা ‘ইভেন্ট’ না, এটি ‘প্রসেস’। নাওমি ক্লেইনের ‘ডিজাষ্টার ক্যাপিটালিজ’ বইটা বেশ। ট্রাম্প যে ‘ক্রাইসিস’ সৃষ্টি করলেন, সেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আরো শক্তিশালী করবে ভবিষ্যতে। মানে, বাইডেন শক্তিশালী আমেরিকা হাতে পাচ্ছে। অধিকাংশ ক্রাইসিসের ফলাফলটাই এমন- রাষ্ট্র শক্তিশালী হয়। হুম, অ্যানার্কিস্টদের মতো শোনাচ্ছে!?
সকালে নাস্তার পর আমার কলম্বিায়ান বন্ধুকে সুপার মার্কেট থেকে আনা কলা খেতে দিলাম। কলার ষ্টিকারে লেখা আছে এটি কলম্বিয়া থেকে আনা। ভাবলাম, খুশি হবে। কিন্তু সেটি শুনতেই লেকচার দিতে শুরু করে, “তুমি কি জানো, স্থানীয় কৃষকদের ‘গেরিলা’ আর ‘কোকেন চাষী’, ‘ড্রাগ ডিলার’ হিসাবে কালিমা দিয়ে সরকারের প্যারা মিলিটারীরা তাদের হত্যা করেছিল শুধুমাত্র তাদের জমিগুলি দখল করার জন্য। সেই জমি সরকার দখল নিয়ে প্লানটেশান মালিকদের ইজারা দিয়েছিলো কলার বাগান করার জন্য। এটি সেই জমির কলা, আমি এই কলা খাই না!”
আমি বেশ অবাক হয়ে বললাম, “নার্কোস” সিরিজে এই কথাগুলিতো বেমালুম চেপে যাওয়া হয়েছে।” সে কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বললো, “ গ্যাবো (গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস), পাবলো এস্কোবার আর আর্টুরু এস্কোবারের বাইরে কি তুমি কলম্বিয়া নিয়ে আর কিছু ভাবতে পারো না?।” আমি বললাম, “ দেশটা তোমার, ভাবো তুমি। আমি বরং এখন জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে একটু ভাবি!”  দ্যা হেগ। ০৭-০১-২০২১
ফাহমিদ আল জায়িদ, সহকারী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
0 Shares

Leave A Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one + five =