মূল লেখা : হেলেন প্লাকরোজ

তরজমা: সাইয়েদা মেহের আ. শাঁওলি

উত্তর আধুনিকতাবাদ কেবলমাত্র উদার গণতন্ত্র নয় বরং স্বয়ং আধুনিকতার জন্যই একটি হুমকি পরিবেশন করছে। এ কথাটি শুনলে দুঃসাহসী, ক্ষেত্রবিশেষে আবার অতিরঞ্জিত একটি বয়ান বলে মনে হতেই পারে, কিন্তু বাস্তবতা এই যে, উত্তর আধুনিকতাবাদের গোড়ার দিককার চিন্তা ও আদর্শগুচ্ছ জ্ঞানজগতের সীমানা পাড় করে একটি বৃহৎ সাংস্কৃতিক শক্তি অর্জন করে নিয়েছে পশ্চিমা সমাজে। উত্তর আধুনিকতাবাদের অযৌক্তিক এবং পরিচয় প্রদানকারী “লক্ষণগুলি” খুব সহজে চেনা যায় এবং বহুলভাবে সমালোচিতও, কিন্তু যেসব তত্ত্বে এটি অন্তর্নিহিত তা অনেক সময়ে ভালো করে বোধগম্যই নয়। তার আংশিক কারণ এই যে, উত্তর আধুনিক তাত্ত্বিকরা নিজেরাই নিজেদের কদাচিৎ পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করেছেন এবং অন্য কারণটি হল এর মজ্জাগত অসঙ্গতি এবং একটি চিন্তাধারা হিসেবে এর আত্মবিরোধ, যা এক প্রতিষ্ঠিত বাস্তবতা বা বিশ্বাসযোগ্য জ্ঞানের টিকে থাকাকে অস্বীকার করে। যাহোক, উত্তর আধুনিকতার গোড়ায় সঙ্গত কিছু ধারণা আছে এবং সেগুলি বোঝা আবশ্যকীয় যেহেতু আমরা তা খন্ডন করতে চাইছি। এগুলোই সেই সমস্যাগুলোকে প্রশ্রয় দেয় যা আমরা সোশাল জাস্টিস একটিভিজমে আজকাল দেখতে পাচ্ছি, যা বামপন্থার বিশ্বাসযোগ্যতার ভিত্তি নড়বড়ে করে দিচ্ছে এবং আমাদের একটি যুক্তিহীন ও ট্রাইবাল “প্রাক-আধুনিক” সংস্কৃতিতে ফেরত যাবার কথা বলে।

উত্তর আধুনিকতাবাদ, সহজ কথায় বলতে গেলে, এটি ১৯৬০ এর দশকে ফ্রান্সে শুরু হওয়া আর্টিস্টিক এবং দার্শনিক একটি আন্দোলন যা আমাদের উপহার দিয়েছে কিছু ধাঁধা লাগানো আর্ট এবং তার থেকেও ধাঁধা লাগানো কিছু তত্ত্ব। যা কল্পিত হয়েছিল প্রগতির পুরোধা এবং পরাবাস্তব কিছু আর্ট এবং তারও আগের কিছু দার্শনিক ভাবনার ওপর, বিশেষ করে নিৎসে ও হেইডেগারের, এর বিপরীত বাস্তববাদী এবং সমন্বিত ও সুসঙ্গত স্বতন্ত্রতার ধারণাকে এর প্রত্যাখ্যানের জন্যে। উদার মানবতাবাদ এবং আধুনিক আর্টিস্টিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনের বিপরীতে প্রতিক্রিয়াশীল ছিল এটি, যাকে এর প্রবক্তারা সাধাসিধেভাবে দেখতেন সার্বজনীন একটি পশ্চিমা, মধ্যবিত্ত পুরুষের অভিজ্ঞতা হিসেবে।

এটি একই অভিযোগে বাতিল করে দেয় সেইসব দর্শনকে যা নীতিশাস্ত্র (ethics), যুক্তি (reason) ও স্পষ্টতাকে (clarity) মূল্যায়ন করত। আরও আক্রমণের শিকার হয়েছিলো কাঠামোবাদ, একটি ধারা যা চেষ্টা করে (কখনোবা অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে চেষ্টা করে) মনূষ্য সংস্কৃতি এবং মনোবিজ্ঞানকে ব্যাখ্যা করতে। মার্কসবাদ, তার সমাজের শ্রেণী এবং অর্থনৈতিক কাঠামোর বুঝসমেত একইভাবে পরিগণিত হয়েছিল সরল এবং অনমনীয় (rigid) হিসেবে। এসবের ওপরে, উত্তরাধুনিকতাবাদীরা আক্রমণ করেছিলো বিজ্ঞানকে এবং এর বস্তুনিষ্ঠ (objective) জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যকে, যে জ্ঞানকে তারা এমন এক বাস্তবতা বিবেচনা করত যা ছিল কেবল বুর্জোয়া, পশ্চিমা অনুমান দ্বারা শাসিত অন্যসব মতাদর্শের মতন।

সন্দেহাতীতভাবে, উত্তরাধুনিকতাবাদের নাইলিস্টিক এবং বিপ্লবী দু’ধরনের এথোসই ছিল যা যুদ্ধ-উত্তর, পশ্চিমা সাম্রাজ্য-উত্তর যুগের ভাবধারার সাথে তাল মিলিয়ে চলত। যতই উত্তরাধুনিকতাবাদ বিকশিত ও বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠতে লাগলো, ততই এর বৈপ্লবিক “পরিচয় কেন্দ্রিক রাজনীতি” অংশটির কাছে প্রাথমিকভাবে দৃঢ় নাইলিস্টিক বিনির্মানের পর্বটি অপ্রধান হয়ে যেতে লাগলো (মৌলিক হবার পরও)।

এটি ইতোমধ্যে একটি তর্কের ব্যাপার যে উত্তরাধুনিকতাবাদ আদৌ আধুনিকতার একটি প্রতিক্রিয়া কিনা। আধুনিকতার যুগ হল সেই সময়কাল যা রেনেসাঁর মানবিকতা দেখেছে, আলোকময়তা দেখেছে, বিজ্ঞানের বিপ্লব ও মানবাধিকারের উদার আদর্শের নির্মাণ দেখেছে; সেই সময়কাল যখন পশ্চিমা সমাজ ধীরে ধীরে বিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিপরীতে যুক্তি ও বিজ্ঞানকে জ্ঞানের গোড়া হিসেবে মূল্যায়িত করা শুরু করেছে, এবং এ ধারণা তুলে এনেছে যে মানব প্রজাতির একজন একক সদস্য হিসেবে শ্রেনিবদ্ধ সমাজের ভূমিকাপ্রাপ্ত হয়ে কোন যৌথ শক্তির প্রজা হবার থেকে অধিকার ও স্বাধীনতা পাওয়া শ্রেয়।

এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটেনিকা উত্তরাধুনিকতাবাদ সম্পর্কে বলেছে, ‘‘এটি বৃহৎ ভাবে পশ্চিমা ইতিহাসের দার্শনিক ধ্যান ধারণা এবং আদর্শের ওপর এক ধরনের প্রতিক্রিয়া।” যেখানে স্ট্যানফোর্ড এনসাইক্লোপেডিয়া অফ ফিলোসফি থেকে বলেছে, ‘‘যদিও, এর নিজস্ব বিবাদ আছে স্বয়ং আধুনিকতার সাথে, উত্তরাধুনিকতবাদ হল আধুনিক চিন্তাভাবনারই অন্য স্বরূপ।” আমি বলি এ পার্থক্যটি নির্নয় সম্ভব আধুনিকতাবাদকে আমরা কোন শর্তে দেখি, এটি যা কিছু নষ্ট করেছে তার বিবেচনায় নাকি যা কিছু দিয়ে গেছে তার হিসেবে। যদি আমরা আধুনিকতার মূল খুঁজে পাই বিজ্ঞান ও যুক্তি এবং তার পাশাপাশি মানবিকতা ও সার্বজনীন উদারনৈতিকতার উৎকর্ষের মাঝে, তবে উত্তরাধুনিকতাবাদীরা ছিলেন তার বিপক্ষে। যদি আমরা আধুনিকতাবাদকে দেখি সামন্ততন্ত্র, চার্চ, পুরুষতন্ত্র, এবং সাম্রাজ্যের মত ক্ষমতা কাঠামোকে ভেঙে ফেলেছে; এমন দৃষ্টিতে, তাহলে উত্তরাধুনিকতাবাদীরা সেটি চলমান রেখেছে, যদিও বর্তমানে তার দৃষ্টি বিজ্ঞান, যুক্তি, মানবিকতা এবং উদারনৈতিকতার দিকে। পরিণামে, উত্তরাধুনিকতাবাদের শিকড় ব্যুৎপত্তিগত ভাবে রাজনৈতিক ও বিপ্লবী, যদিও একটি ধ্বংসাত্মক অথবা, তারা যেভাবে এটিকে ব্যাখ্যা করে, বিনির্মাণ-এর (Deconstructive) উপায়ে

‘উত্তরাধুনিকতাবাদ’ শব্দটি প্রথম উদ্ভাবিত হয়েছিলো জ্যঁ-ফ্রান্সোয়া লিওতারের ১৯৭৯ সালের একটি বই ‘দ্যা পোস্টমর্ডান কন্ডিশন’ এর মধ্য দিয়ে। তিনি উত্তরাধুনিকতাবাদকে সংজ্ঞায়িত করেছেন ‘মেটান্যারাটিভসের প্রতি এক অবিশ্বাস’, হিসেবে। মেটান্যারাটিভ হল কোনো বিশাল ঘটনার বিস্তৃত ও সংযোজকশীল ব্যাখ্যা। ধর্ম এবং অন্যান্য মোটের ওপরের মতাদর্শগুলো জীবন ও সমাজের দুর্দশাগুলো ব্যাখ্যা করার প্রয়াসের মাধ্যমেই মেটান্যারাটিভ পরিচয় পায়। লিওতার প্রস্তাব করলেন এদেরকে মিনিন্যারাটিভ দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে যাতে ছোট ছোট এবং আরও ব্যক্তিগত ‘সত্য’ পাওয়া সম্ভব হয়। তিনি খ্রিস্টধর্ম এবং মার্ক্সবাদকে এভাবে পর্যালোচনা করেছেন, তার সাথে বিজ্ঞানকেও।

এই দৃষ্টিতে, “বিজ্ঞান নামের ভাষাটি এবং নৈতিকতা ও রাজনীতি নামে পরিচিত ভাষাটির মাঝে আছে একটি কঠিন আন্তঃসংযোগ” (পৃ ৮)। বিজ্ঞান ও এটি সরকার ও ক্ষমতা কেন্দ্র করে যে জ্ঞানের তৈরি করে তাকে একই সুঁতোয় বেঁধে তিনি বিজ্ঞানের বস্তুনিষ্ঠতার প্রতি প্রশ্ন তুলেছেন। লিওতার বলেছেন এই বিশ্বাসহীনতা উত্তর আধুনিকতাবাদের একটি সাধারণ শর্ত, এবং এ নিয়ে তর্ক করেছেন যে ১৯ শতকের শেষ থেকে, ‘জ্ঞানের নৈতিক মন্ত্রের একটি অভ্যন্তরীন ক্ষয়’ শুরু হয়ে গেছিলো যা জ্ঞানের স্বরুপকে পরিবর্তন করে দেয় (পৃ ৩৯)। ১৯৬০ সালের মধ্যে বিজ্ঞানীদের এই উদ্ভূত ‘সন্দেহ’ এবং ‘নীতির বিবর্জন’ “নীতিকরনের কেন্দ্রিক সমস্যার ওপর প্রভাব” তৈরি করলো (পৃ ৮)। তাকে কোনো বিজ্ঞানীরা বলেন নি যে তারা নীতি বিবর্জিত নন অথবা তারা যে নিয়মের অনুশীলনকারী যার ফলাফল সর্বদা অস্থায়ী এবং অনুকল্পগুলো সর্বদা দোদুল্যমান ও কখনোই ‘প্রমানিত’ নয়, সে ব্যাপারে তারা মোটেও সন্দেহ করে।

আমরা লিওতারের কাছ থেকে দেখি গবেষণামূলক প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে থাকা এক ধরনের স্পষ্ট এপিসটেমিক আপেক্ষিকতার ( ব্যক্তিগত বা সাংস্কৃতিক ভাবে নির্দিষ্ট সত্য বা ঘটনার ওপরে বিশ্বাস) প্রতিচ্ছবি। আমরা এও দেখি যে বহুত্ববাদের (pluralism) একটি রূপের অগ্রগমন, যা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দর্শনকে বিজ্ঞানী অথবা উদারনৈতিক গনণতন্ত্রের নীতির সাধারণ ঐক্যমতের চেয়ে অগ্রাধিকার দেয়, কর্তৃত্বপরায়ন ও গোঁড়া হিসাবে উপস্থাপন করে। এ ব্যাপারটি উত্তর আধুনিক চিন্তায় একদম অটল।

 

জ্যাঁ জ্যঁ ফ্রান্সোয়া লিওতার

মিশেল ফুকোর কাজও ভাষা ও আপেক্ষিকতা কেন্দ্রিক যদিও তিনি এটি প্রয়োগ করেছেন ইতিহাস এবং সংস্কৃতির ওপর। এভাবে অগ্রসর হওয়ার নাম তিনি দিয়েছেন “প্রত্নতত্ত্ব” কেননা সে নিজে ঐতিহাসিক সংস্কৃতির দিকগুলো বিভিন্ন নথিভুক্ত ডিসকোর্সের (বক্তব্য যা কোনো বিশেষ দর্শনকে অগ্রসর অথবা গ্রহণ করে) আলোকে ‘উন্মোচন’ করে দেখেছেন বলে মেনে নিয়েছেন৷ ফুকোর কাছে, যা কিছু ‘জানা’ তাই ডিসকোর্স নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং ভিন্ন ভিন্ন কাল ও স্থানে, বিভিন্ন গঠনতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা ডিসকোর্সকে নিয়ন্ত্রণ করে। এভাবে, জ্ঞান হল ক্ষমতার একটি সরাসরি উৎপাদন। “যেকোনো সংস্কৃতি এবং সময়ে, কেবলমাত্র একটি ‘এপিস্টেম’ থাকে যা অন্য সব জ্ঞানের সম্ভাব্যতার শর্ত নির্দেশ করে দেয়, হয় কোনো তত্ত্বের সাহায্যে, নতুবা নিরবে কাজে লাগার মাঝ দিয়ে। [১]

তবুও, মানুষ নিজেরাই তো সাংস্কৃতিক ভাবে নির্মিত। “নিজস্ব পরিচয় ও চরিত্রাবলির সাথে, একক ব্যক্তিসত্ত্বা তো দেহ, বহুতা, আন্দোলন, কামনা, সৈন্য এসবের ওপর চর্চিত ক্ষমতার ফলে উৎপন্ন এক ধরনের দ্রব্যজাত।” [২] তিনি ব্যক্তিগত সংস্থান বা সায়ত্তশাসনের কোনো হিসাব রাখেন নি। যেমন করে ক্রিস্টোফার বাটলার বলেছিলেন , ফুকো, “ নির্ভর করেন স্বতন্ত্র ব্যক্তির শ্রেণী ব্যবস্থার তাগিদে তৈরি হওয়া সহজাত মন্দতার ওপর, অথবা পেশার ফলে তৈরি পদের ওপর, যাকে ‘ডিসকোর্স’ হিসেবে দেখা হয়, তার নিজস্ব আচরণের নৈতিকতা নির্বিশেষে। [৩] তিনি মধ্যযুগীয় সামন্ততন্ত্র এবং আধুনিক লিবেরাল ডেমোক্রেসি বা উদারনৈতিক গনতন্ত্রকে একইরকম অত্যাচারী হিসেবে দেখিয়েছেন, এবং উদ্যোগ নিয়েছিলেন ইন্সটিটিউশনের ব্যাপারে সমালোচনা এবং তাকে আক্রমণ করার যাতে, “এর (ইন্সটিটিউশন এর) ভেতরে নিভৃতে যে রাজনৈতিক সহিংসতার চর্চা চলতে থাকে” তা সবার সামনে উম্মোচন করতে পারেন।

অধিকন্তু, মানুষ নিজেরাই সাংস্কৃতিকভাবে নির্মিত। “ব্যক্তি, তার পরিচয় এবং চরিত্র, একটি ক্ষমতা সম্পর্কের ফল, যা প্রযুক্ত হয় দেহে, বহুত্বে, চলাচলে, কামনায়, শক্তিতে।” [২] তিনি ব্যক্তিগত এজেন্সি বা স্বাধীনতার (অটোনমি) জন্য কোনো জায়গা ছাড়েন নি। যেমনটি ক্রিসটোফার বাটলার বলেছেন, ফুকো ‘অন্তর্নিহিত মন্দের এমন সব বিশ্বাসে ভরসা করেন যেখানে ব্যক্তির শ্রেণি অবস্থান  বা পেশাগত অবস্থানই সব, যেটাকে বলা হয় ডিসকোর্স, ব্যক্তির নিজস্ব আচরণ বা নৈতিকতাকে এখানে দেখা হয়না” [৩] তিনি মধ্যযুগীয় সামন্ততন্ত্র ও আধুনিক উদারনৈতিক গনতন্ত্রকে সমপরিমানে পীড়নকর হিসাবে  পরিবেশন করেন এবং প্রতিষ্ঠানসমূহের সমালোচনা ও আক্রমণের উদ্যোগ নেন যাতে “রাজনৈতিক সহিংসতা যা সবসময়ই নিভৃতসারে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে” তার স্বরূপ উন্মোচিত হয় [৪]

আমরা ফুকোর কাছ থেকে দেখি যে সাংস্কৃতিক আপেক্ষিকতার চরম প্রকাশটিও আসলে ক্ষমতা কাঠামোর মধ্যে নিহিত যেখানে অংশীদারিত্বমূলক মানবিকতা (শেয়ার্ড হিউমেনিটি) এবং ব্যক্তিস্বতন্ত্রতা (ইন্ডিভিজুলিয়াটি) প্রায় পুরোটাই অনুপস্থিত। তার বদলে, মানুষেরা তৈরী হচ্ছে প্রভাবশালী সংস্কৃতিগত চিন্তাধারার সাথে তাদের অবস্থানের সম্পর্কের মাধ্যমে, হয় অত্যাচারী হিসেবে নয়ত অত্যাচারিত হিসেবে। জুডিথ বাটলার তার কুইয়ার তত্ত্বে জেন্ডারের সাংস্কৃতিক বিনির্মানকে তুলে ধরতে মৌলিক ভূমিকায় ফুকোকে টেনেছেন, উত্তর উপনিবেশিকতা এবং ‘প্রাচ্যবিদ্যা’ নিয়ে কাজে পরবর্তীতে এডওয়ার্ড সাইদ যেমনটি এনেছেন, এবং কিমবারলে ক্রেনশ তার ‘ইন্টারসেকশনালিটি’ এর পরিবর্ধন ও পরিচয় কেন্দ্রিক রাজনীতির প্রচারেও তা এসেছে। আমরা এরই সাথে সহিংসতা ও বলপ্রয়োগের সাথে ভাষার সমীকরণ এবং যুক্তি ও সর্বজনীন উদারনৈতিকতার সাথে জুলুমের সমীকরণও দেখতে পাই।

জ্যাক দেরিদা হলেন সেই মানুষটি যে আমাদের ‘বিনির্মান’ এর ধারণার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। এবং তিনি নিজেও সাংস্কৃতিক নির্মান এবং সাংস্কৃতিক ও ব্যক্তিগত আপেক্ষিকতা নিয়ে তর্ক করেছেন। তিনি বেশি মনোযোগ দিয়েছেন ভাষার স্পষ্টতার ওপর। দেরিদার সবচে জনপ্রিয় রায়, There is no outside text” শব্দের মাধ্যমে যেকোনো কিছুকে সোজাসাপটাভাবে উল্লেখ করার ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে। বরং, “কোনো পরম নির্দেশনার কেন্দ্রের অভাবে এখন কেবলমাত্র প্রেক্ষিত টিকে রয়েছে।” [৫]

অতএব সেই অর্থে কোনো লেখনীর লেখক সেই লেখার কর্তা (অথরিটি) নন। পাঠক ও শ্রোতারা প্রত্যেক লেখনীর সমানভাবে তাদের নিজস্ব সুযোগ্যপূর্ণ অর্থ তৈরি করে নেয়  “একদম অসাধারণ কায়দায় অসীম সংখ্যাক নতুন প্রেক্ষিত প্রসব করে নেয়।” দেরিদা একটি নতুন টার্ম ‘ডিফের‍্যান্স’ (différance) স্থাপন করেন, ক্রিয়াপদ ‘ডিফারার’ থেকে যার অর্থ ‘স্থগিত করা’ (to defer) ও ‘পার্থক্য করা’ (to differ) দুইকেই বোঝায়। এটা তিনি করেছেন ব্যক্ত করতে যে কোনোকিছুর অর্থই কখনো চূড়ান্ত না বরং এটি নির্মিত হয় পার্থক্যের মাধ্যমে, বিশেষত বিপরীত অর্থ দ্বারা। ‘তরুণ’ শব্দটি কেবলমাত্র অর্থবহ হবে ‘বৃদ্ধ’ শব্দটির সাথে এর সম্পর্ক স্থাপিত হলে, তিনি সোস্যুরকে অনুসরণ করে বলেছেন, যে অর্থ সর্বদা নির্মিত হয় প্রাথমিকভাবে বিপরীতের সাথে দ্বন্দ্বের মাধ্যমে, তার মতে, সবসময় যার একটি হয় ধনাত্মক অপরটি নেতিবাচক। “পুরুষ” হল ধনাত্মক এবং “নারী” ঋণাত্মক। “পাশ্চাত্য” হল ধনাত্মক এবং “প্রাচ্য” ঋণাত্মক ৷ তিনি জোর দিয়ে বলেন “আমরা এখানে কোনো মুখোমুখি শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান নিয়ে কাজ করছি না, বরং কাজ করছি এক ধরনের সহিংস ক্রমোচ্চতা (ভায়োলেন্ট হায়ারার্কি) নিয়ে। দুটো টার্মের একটি আরেকটিকে পরিচালনা করে (নীতিগতভাবে, যৌক্তিকভাবে ইত্যাদি), অথবা সুবিধার ফল (থান) ভোগ করে। বিপরীত টার্মকে বিনির্মিত করতে হলে, সবার প্রথমে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এই ক্রমোচ্চ শ্রেণিবিভাগকে উল্টে দিতে হবে।” [৬] বিনির্মান, তাহলে, এই মজ্জাগত শ্রেনিবিন্যাসকে উল্টে দেয়ার সাথে জড়িত, “নারী” ও “প্রাচ্য” কে ধনাত্মক ও “পুরুষ” ও “পাশ্চাত্য” কে নেতিবাচক করার সাথে জড়িত। …

আমরা দেরিদার মাধ্যমে এর চেয়েও এগিয়ে থাকা আপেক্ষিকতাবাদ দেখি, সাংস্কৃতিক ও জ্ঞানজাগতিক উভয় দিক থেকেই, এবং দেখি পরিচয় কেন্দ্রিক রাজনীতি নিয়ে আরও অনেক ওজর। এরকম একটি স্পষ্ট প্রত্যাখ্যান অবশ্য আছে যে বিভাজন বৈপরীত্য কেন্দ্রিক না হয়ে অন্য উপায়েও হতে পারে এবং একইভাবে আছে বৈষম্য কাটিয়ে উঠতে এবং সার্বজনীন মানবাধিকার এবং ব্যক্তির স্বাধীনতা ও ক্ষমতায়নের উপর আলোকপাত করার আলোকময়তার উদারপন্থার মূল্যবোধগুলির প্রত্যাখ্যান। আমরা এখানে দেখি এক ধরনের ‘কৌতুকপূর্ণ গন্ডগোল’ (ironic misandry) এর ভিত্তি এবং ‘ বিপরীত বর্ণবাদ বাস্তবিক কিছু নয়’ মন্ত্রটি এবং যা কিছু বোধগম্য তা সবই পরিচয় শাসন করে এমন একটি ভাবনা। বক্তব্যে ও যুক্তিতে স্বচ্ছতার প্রয়োজনীয়তা, অন্যের ভাবাদর্শ বুঝতে পারা এবং সারমর্ম এড়িয়ে চলা ইত্যাদি বিষয়ের খারিজও আমরা দেখতে পাই। বক্তার উদ্দেশ্যই যেন অপ্রাসঙ্গিক কথা। …

জ্যাক দেরিদা

লিওতার, ফুকো এবং দেরিদা কেবল উত্তরাধুনিকতাবাদের তিন ‘জনক’ যদিও তাদের চিন্তা খানিকটা অন্যান্য প্রভাবশালী ‘তাত্ত্বিক’ দের সাথে সাধারণ আখ্যানে মিলে যায় এবং পরবর্তীতে উত্তরাধুনিকতাবাদীরা এই চিন্তাগুলোকে নিয়ে সমাজবিজ্ঞান ও হিউম্যানিটিস এর বিভিন্ন শাখায় বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করেছেন৷ আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি যে এটি ভাষার প্রতি দারুনভাবে সংবেদনশীল, এমন পর্যায়ে যে একটি শব্দের নির্দেশনায় বক্তা কী বলছেন তার থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় এটি কিভাবে গৃহীত হচ্ছে তা, এর ব্যাখ্যা যতই সহজাত হোক না কেন। অংশিদারী মানবিকতা (Shared humanity) এবং ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধ মূলত (সারতঃ) এক ধরনের ধোঁকা এবং মানুষ হয় প্রোপাগ্যাটোরস অথবা ডিসকোর্সের শিকার যা আবার নির্ভর করে সামাজিক অবস্থানের ওপর; এক অবস্থান যা সমাজের সাথে ব্যাক্তির সম্পর্কের থেকে নিজ পরিচয় কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। নৈতিকতা সাংস্কৃতিকভাবে আপেক্ষিক, ঠিক যেমনটি হল বাস্তবতা। গবেষণালব্ধ ফল হচ্ছে সন্দেহজনক যেমনটা সংস্কৃতিগতভাবে প্রভাবশালী ধারনাগুলোও, যার মাঝে পরে বিজ্ঞান, যুক্তি, এবং সর্বজনীন উদারনৈতিকতা। এগুলো হল আলোকময়তার সেসব আদর্শ যা সরল, মোটের ওপর তৈরি এবং অত্যাচারী, এবং এগুলোকে চূর্ণবিচূর্ণ করা এক ধরনের নৈতিক প্রয়োজনীয়তা। এর থেকে বহুগুনে গুরুত্বপূর্ন হল বেঁচে থাকার অভিজ্ঞতা, “প্রান্তিক” দলগুলোর আখ্যান এবং বিশ্বাসসমূহ যা সমানভাবেই “সত্য” কিন্তু যার অবস্থান অবশ্যই বর্তমানে আলোকময়তার আদর্শের ওপরে ঠাই দিতে হবে যাতে উদারনৈতিক অত্যাচারী, অন্যায় ও সম্পূর্ন আলাদা সার্বভৌম বাস্তবতা, নৈতিকতা ও জ্ঞানের নির্মানকে উল্টে দেয়া যায়।

এই স্থিতিশীলতা কে ‘চুর্ণ বিচুর্ন’ (smash) করার কামনা, ব্যাপকভাবে বিস্তৃত আদর্শ ও প্রতিষ্ঠানকে চ্যালেঞ্জ করা এবং প্রান্তিকদের জয় করা সম্পূর্ণভাবে উদারনৈতিক নীতির দিক থেকে। এর বিপরীত রূপটি অটলভাবে গোঁড়া। এটাই হল ঐতিহাসিক সত্য, কিন্তু আমরা ইতিহাসের একটি উদ্ভট সময়ে এখন আছি যেখনে স্থিতীশীল অবস্থা পুরোপুরি ধারাবাহিকভাবে উদারপন্থি, আছি সেই উদারনৈতিকতার ঝান্ডার নিচে যা স্বাধীনতা, সম অধিকার এবং জেন্ডার, রেইস এবং সেক্সুয়ালিটি নির্বিশেষে সকলের জন্য সমান সুযোগের কথা বলে। এর ফলে তৈরি হল এমন এক বিভ্রান্তি যেখানে জীবনভর উদারপন্থীরা উদারনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে যেয়ে বুঝতে পারে যে তাদের রক্ষনশীল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে এবং যারা রক্ষণশীলতা এড়ানোর লক্ষ্যে সর্বদা প্রচেষ্টারত তারাও বিযুক্তিবাদ ও বিউদারনৈতিকতাকে সমর্থন করে ফেলছে। প্রথম প্রথম উত্তরাধুনিকতাবাদীরা  ডিসকোর্সকে ডিসকোর্সের সাহায্যে প্রশ্নের সম্মুখীন করছিলেন, একটিভিস্টরা সেসব ধারণা দ্বারা পুষ্ট হয়ে আরও বেশি স্বৈরাচারী হয়ে আরো যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌছাচ্ছে।  বাকস্বাধীনতা এখন হুমকির সম্মুখীন কেননা বক্তব্যই এখন বিপজ্জনক। এতটাই বিপদজনক যে যারা নিজেদের উদারপন্থী মনে করেন তারা সহিংসতার দিয়ে ন্যায্যতা পরিমাপ  করতে পারেন। যুক্তিতর্কের মাধ্যমে বুঝিয়ে কোনো ঘটনা বর্ননা করা বর্তমানে প্রায়শই প্রতিস্থাপিত হয়ে যায় পরিচয়ের আরোপে এবং নিখাদ রাগের সাথে।

বর্ণবাদ, যৌনতাবাদ, হোমোফোবিয়া, ট্রান্সফোবিয়া এবং জেনোফোবিয়া এসব পশ্চিমা সমাজগুলোতে সর্বকালের সবচেয়ে নিম্নস্তরে রয়েছে তার প্রমান থাকা সত্ত্বেও, বামপন্থী শিক্ষাবিদেরা এবং সোশাল জাস্টিস একটিভিস্টরা এক ধরনের অদৃষ্টবাদী পেসিমিজম প্রদর্শন করে, এটি সক্রিয় হয় উত্তর আধুনিক ব্যাখ্যাসংবলিত “পড়াশোনা” করার মাধ্যমে যা নিশ্চিতকারী পক্ষপাতকেই উপরে তুলে ধরে৷ উত্তর আধুনিক শিক্ষাবিদ এবং একটিভিস্টদের স্বৈরাচারী ক্ষমতা তাদের কাছে প্রকাশ পায় না যখন বাকি সবার কাছে তা জলের মতন পরিষ্কার। যেমন ইন্টারসেকশনালিটি নিয়ে এন্দ্র‍্যু সালিভান বলেছেন:

এটি একটি ধ্রুপদী গোঁড়ামি পোষণ করে যা প্রত্যেকটি মানুষের অভিজ্ঞতাকে বর্ণনা করতে পারে এবং যার মাধ্যমে সব বক্তব্যই অবশ্যই ছেঁকে আসেঠিক যেমন অতিনৈতিকতা জনপ্রিয় ছিল নিউ ইংল্যান্ডে, ইটারসেকশনালিটি ভাষা ও ডিসকোর্সের নিজস্ব পদাবলীও নিয়ন্ত্রন করে” []

উত্তর আধুনিকতাবাদ পরিনত হয়েছে একধরনের লিওটারডিয়ান মেটান্যারাটিভে, একটি ফুকোডিয়ান  ডিসকার্সিভ ক্ষমতার কাঠামোতে, এবং একটি দেরিদিয়ানের অত্যাচারী ক্রমোচ্চ শ্রেনিবিভাগে

স্ব-রেফারেনশিয়ালিটির (self-referentiality) যৌক্তিক সমস্যা দার্শনিকরা প্রায় সাবলীলভাবে বের করে দেখিয়ে দিয়েছেন উত্তর আধুনিকতাবাদীদের কাছে কিন্তু তারা ব্যাপারটিকে বিশ্বাসজনক হিসেবে গ্রহণ করাটা এখনও বাকি রেখেছেন। যেভাবে ক্রিস্টোফার বাটলার বলেছন, “লিওতারের মেটান্যারাটিভকে বাদ দেবার দাবীর সম্ভবপরতা বিংশ শতাব্দীতে সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে বুদ্ধিজীবী প্রান্তিক গোষ্ঠির আবেদন সাংস্কৃতিকভাবে আছে কিনা তার ওপর৷ ” অন্যভাবে বলতে গেলে, লিওতারের দাবী সরাসরি এসেছে তার বুর্জোয়া একাডেমিক দুনিয়ায় উৎপন্ন ডিসকোর্স থেকে, কার্যত, এমন আরেকটি মেটান্যারাটিভ থেকে যার সম্পর্কে সে দূর থেকে বিশ্বাস করতে নারাজ নয়। ঠিক তেমনভাবেই, ফুকোর আলোচনায় যেখানে বলা হচ্ছে জ্ঞান ঐতিহাসিকভাবে শর্তসাপেক্ষ, হয়ত সেই আলোচনাটিই নিজে ঐতিহাসিকভাবে শর্তসাপেক্ষ, এবং যেকোনো কেউ আশ্চর্যান্বিত হবে দেরিদা কেন কষ্ট করে পাঠের অসীম নমনীয়তা সম্পর্কে এত বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যা করতে গেছেন যদি যে কেউ তাঁর পুরো কাজটি পড়তে পারে এবং দাবি করতে পারে যে এটি একই রকম কর্তৃত্বের সাথে করা এক খরগোশের গল্প।

এগুলো, অবশ্যই, উত্তর আধুনিকতাবাদ প্রসঙ্গে সচরাচর তোলা একমাত্র সমালোচনা নয়। জ্ঞানকান্ডীয় সাংস্কৃতিক আপেক্ষিকতাবাদের সবচেয়ে প্রত্যক্ষ সমস্যা বিভিন্ন দার্শনিক ও বিজ্ঞানীদের দ্বারা উত্থাপিত হয়েছে। দার্শনিক, ডেভিড ডেটমার চ্যালেন্জ্ঞিং পোস্টমর্ডানিজম এ বলেছেন,

এই উদহারণটাই ধরুন, এরাজিম কোহাকের (Erazim Kohak) কাছ থেকে পাওয়া, ‘যখন আমি চেষ্টা করিঅসফল ভাবে, একটি টেনিস বলকে একটি ওয়াইনের বোতলে জোর করে পুরে ফেলার, আমার প্রয়োজন পরে না এর আগে কয়েকটি ওয়াইন বোতলে কয়েকটি বল পুরে ফেলার চেষ্টা করার, মিলসের অনুমান সম্পর্কিত ব্যবহারিক আদর্শ অনুসরন করেই আমি, আরোহ পদ্ধতিতে এই অনুমানে পৌছাতে পারি যে টেনিস বল একটি ওয়াইনের বোতলে আঁটবে না‘…. এখন আমাদের সবকিছু উল্টে দিয়ে প্রশ্ন করার সময় এসে গেছে, ‘যদি আমি এই রায় দেই যে টেনিস বল টি ওয়াইনের বোতল এর মধ্যে আঁটবে না, তবে কি এটি আমার জেন্ডার, ঐতিহাসিক ও ভৌগলিক অবস্থান, শ্রেনি, জাতি ইত্যাদি আমার এই রায়ের বস্তুনিষ্ঠতা মাটি করে দিতে পারবে কিনা” []

যাইহোক, তিনি কোনো উত্তর আধুনিকতাবাদীকে দেখেন নি তার এসব যুক্তি বর্ণনা করবার প্রয়াস করতে এবং এক উত্তর আধুনিক দার্শনিক, লরিয়ে কালহোউন এর সাথে একটি জমজমাট আলোচনায় তিনি বর্ণনা করেন,

যখনই মাঝে সাঝে আমি তাকে জিজ্ঞেস করতাম যে এটি একটি বস্তুনিষ্ঠ ঘটনা কিনা যে জিরাফ পিঁপড়ার থেকে লম্বা সে জবাব দিত যে এটি একটি নির্দিষ্ট সত্য নয়, বরং আমাদের নিজ সংস্কৃতির ওপরে একধরনের ধার্মিক বিশ্বাসের একটি দ্রব্য” 

পদার্থবিজ্ঞানী এ্যালান সসোককাল এবং জ্যাঁ ব্রিকমন্ট ফ্যাশনেবল ননসেন্স এ ঠিক একই সমস্যা চিহ্নিত করেছিলেন বিজ্ঞানের দৃষ্টি থেকে, উত্তর আধুনিকতাবাদীদের বিজ্ঞানের ওপর বিরক্তি দেখে:

কে সত্যি সত্যি অস্বীকার করে বিবর্তনের মহান আখ্যানকে, সৃষ্টিবাদের মতন এরচে অনেক কম বিশ্বাসযোগ্য আখ্যানের খপ্পরে পড়া কেউ নাহলে? এবং কে কামনা রাখে পদার্থবিদ্যার মৌলিক সত্যগুলোকে অস্বীকার করার? উত্তরটা হল কিছু উত্তর আধুনিকতাবাদীরা

এবং

এখানে অস্বাভাবিক একটা কিছু আছে যখন কেউ একম কিছু খোঁজা বিশ্বাস করে, যেমন ধরুন, কোনো সাধারণ নিয়ম বা সমন্বিত তত্ত্বের ক্ষেত্রে, অথবা এমন কোনো প্রশ্ন যে পরমানুসমূহ আদৌ কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সূত্র মানে কিনস, বা বিজ্ঞানীদের কার্যক্রম কোনোভাবে মজ্জাগত দিক দিয়েই বুর্জোয়াঅথবা ইউরোপঘেষাকিংবা মাসকুলিনিস্টঅথবা কোনো ক্ষেত্রে মিলিটারিস্ট

উত্তর আধুনিকতাবাদ বিজ্ঞানের প্রতি ঠিক কতটা হুমকিস্বরূপ? এখানে অবশ্যই কিছু বাহ্যিক আক্রমন আছে। মিডলবারিতে চার্লস মুরের সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে সাম্প্রতিক কিছু আন্দোলনে, আন্দোলনকারীরা বলে যাচ্ছিলো, সমস্বরে,

বিজ্ঞান সর্বদাই ব্যবহৃত হয়েছে বর্নবাদ, যৌনতাবাদ, শ্রেণি বাদ, ট্রান্সফোবিয়া, আরবেইজম এবং হোমোফোবিয়া ইত্যাদি বৈধ করার জন্য, এসব কিছু যৌক্তিক ও সত্য বলে চালিয়ে দিয়ে, এবং সর্বদাই এই কাজগুলে সমর্থিত হয়েছে সরকার ও রাষ্ট্রের দ্বারাআজকের পৃথিবীতে, খুব কমই প্রকৃত সত্যআছে‘” [

যখন মার্চ ফর সায়েন্সের উদ্যোক্তারা টুইট করলেন:

“উপনিবেশবাদ, বর্ণবাদ, অভিবাসন, স্থানীয় অধিবাসীদের অধিকার, যৌনতাবাদ, আলবেইজম, কুইর-, ট্রানস-, ইন্টারসেক্স- ফোবিয়া এবং অর্থনৈতিক ন্যায় এসবই বৈজ্ঞানিক সমস্যা,” [১০] অনেক বিজ্ঞানীরাই বিজ্ঞানের রাজনৈতিকরণের সমালোচনা করেছেন এবং বিজ্ঞানকে ইন্টারসেকশনাল মতাদর্শ হিসেবে সংরক্ষণ করে রাজনীতির রাস্তা থেকে সরিয়ে আনার দিকে নজর দিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকাতে, #সায়েন্সমাস্টফল এবং #ডিকলোনিয়ালাইজসায়েন্স ইত্যাদি ব্যানারে প্রগতিশীল ছাত্রদের আন্দোলন থেকে ঘোষিত হয়েছে যে বিজ্ঞান একমাত্র পন্থা যেটিকে গ্রহণ করতে শিখানো হয়েছে। তারা প্রস্তাব করেছে জাদুবিদ্যা তার একটি বিকল্প হতে পারে। [১১]

এসবের পরেও, একটি মেথোডোলজি হিসেবে বিজ্ঞান কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে না। এপিস্টেমিক আপেক্ষিকতা অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে এটি ‘অভিযোজিত’ হতে পারবে না অথবা ‘জ্ঞানার্জনের বিকল্প পদ্ধতি’-তেও পরিনণত হতে পারবে না।” এটা পারবে, অবশ্য, মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারাতে এবং সেখান থকে, রাষ্ট্রের অনুদান হারাতে, এবং এই হুমকিটি ফেলে দেবার মত না। তাছাড়াও, এমন এক সময়ে যখন পৃথিবীর শাসকরা যখন জলবায়ু পরিবর্তনকে অস্বীকার করে, অভিভাবকরা এরকম মিথ্যায় বিশ্বাস রাখে যে ভ্যাকসিন নিলে শিশু অটিজমে আক্রান্ত হবে এবং মানুষজন হোমিওপ্যাথি ও নিউরোপ্যাথির কাছে ঘেষছে কঠিন মেডিকেল কন্ডিশন নিয়ে, এর মাঝে এটি গবেষণালব্ধ বিজ্ঞানের প্রতি মানুষের বিশ্বাসকে আরও নড়বড়ে করে দেবে।

সামাজিক বিজ্ঞান এবং মানবিক শাখা, তা সত্ত্বেও, তাদের সমস্ত স্বীকৃতি থেকে মোচিত হবার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সামাজিক বিজ্ঞানের কিছু শাখা ইতিমধ্যেই তা অর্জন করেছে। সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান, সমাজবিদ্যা, কালচারাল স্টাডিস এবং জেন্ডার স্টাডিস, উদাহাহরণস্বরূপ বলা যায়, এগুলো কেবলমাত্র নৈতিকতার আপেক্ষিকতার ভিত্তিতে নয়, বরং এপিস্টেমিক আপেক্ষিকতার ভিত্তিতেও মরে গেছে। ইংরেজি সাহিত্যও, আমার অভিজ্ঞতায়, শেখাচ্ছে উত্তর আধুনিক গোঁড়ামি থেকে। দর্শন, যেমনটা আমরা দেখেছি, ভাগ হয়ে আছে। তেমনিভাবে ইতিহাসও।

প্রায়োগিক ঐতিহাসিকরা অতীতে কি হয়েছে তা আসলেই জানেন এমন দাবী করে প্রায়ই সমালোচিত হচ্ছেন উত্তর আধুনিকবাদীদের কাছে। ক্রিস্টোফার বাটলার মনে করেছিলেন ডায়ানে পারকিসের অভিযোগ যে কিথ থমাস পুরুষের ঐতিহাসিক পরিচয় নিয়ে একটি মিথ তৈরি করেছিলেন “নারীর ক্ষমতা ও বক্তব্যহীনতা” কে ঘিরে যখন তিনি প্রমাণ পেশ করেন যে আসলে ডাইনি বলে অভিযুক্তরা আসলে ছিলেন একেবারে ক্ষমতাহীন ভিক্ষু নারী। সম্ভবত, তার দাবী করা উচিত ছিল, যে তারা ছিল ধনী মহিলা অথবা তার চেয়ে যদি বলত, পুরুষ। যেমনটি বাটলার বলেন,

এমন মনে হয় যেন থমাসের এখানকার গবেষণালব্ধ দাবীগুলো সরলতই পারকিসের ঐতিহাসিক আখ্যান নিয়ে মতবাদের প্রতিদ্বন্দ্বীর বিপরীতে যায়যে এটাকে বর্তমান সময়ের নারীর ক্ষমতায়নের ধারণার সমর্থনে কাজে লাগানো যেতে পারে” (পৃ ৩৬

আমি ঠিক একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলাম যখন আমি সপ্তদশ শতাব্দীর মোড়ের বাস্তবতায় বর্ণ ও লিঙ্গ নিয়ে লিখতে চেয়েছিলাম। আমি ব্যক্ত করেছি যে শেকসপিয়ার এর দর্শকরস কৃষ্ণাঙ্গ ওথেলোর কাছে ডেসডেমনার আকর্ষণ খুঁজে পায় নি, যে কিনা ছিল খ্রিস্টান এবং ভেনিসের একজন সৈনিক, এটা বোঝার জন্য বেশ কঠন কেননা গায়ের রং নিয়ে বিদ্বেষ সপ্তদশ শতাব্দীর আগে ছিল না, যখন আটলান্টিক দাস বেচাকেনার একটি ধারা তৈরি হল তার আগ পর্যন্ত, এবং ধর্মীয় ও জাতিগত বৈষম্য তার আগে সবচেয়ে বেশি স্বচ্ছভাবে ধরা পড়ত৷ একজন বিশিষ্ট প্রফেসর আমাকে বলেন এটি সন্দেহের এবং জিজ্ঞেস করেন তখনকার কৃষ্ণাঙ্গ সমাজ আমার এই দাবীকে কিভাবে গ্রহন করত। যদি আজকের আফ্রিকান আমেরিকানরা এটার ব্যাপারে বাজে বোধ করে, এটা ধরে নেয়া যায় যে, তখন হয় এটা সত্য ছিল না অথবা সপ্তদশ শতাব্দীতে এটা রকাশ করাটা নৈতিকভাবে ঠিক ধরা হত না। যেমনটি ক্রিস্টোফার বাটলার বলেন,

উত্তর আধুনিক চিন্তাধারা সংস্কৃতিকে দেখে কিছু সংখ্যক গল্পের চিরকাল প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে, যার কার্যকারিতা তার স্বাধীন স্বাভাবিক চিন্তাভাবনার আবেদনের ওপর নির্ভর যতটা না করে, তার চেয়েও বেশি করে যে সমাজে সেটি প্রচলিত সেখানে তার আবেদনমময়তা কতটুকু

আমি হিউম্যানিটিস শাখার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে দুশ্চিন্তা গ্রস্ত।

উত্তর আধুনিকতাবাদের এই আপদ কেবলমাত্র সেসব সমাজে সীমাবদ্ধ না যা একাডেমিয়া এবং সামাজিক ন্যায়কে কেন্দ্র করে গঠিত। যাহোক, আপেক্ষিক মতবাদ, ভাষার প্রতি সংবেদনশীলতা এবং পরিচয়ের থেকে মানবিকতা অথবা ব্যক্তিসত্ত্বার দিকে নজর দেয়া-বড় সমাজগুলোতে এসবের কর্তৃত্ব বেড়ে গেছে। এখন অক্ষরে অক্ষরে কোনো প্রমান কে পরীক্ষা করার চেয়ে তুমি কেমন বোধ করছো এটা নিয়ে কথা বলা বেশি সহজ। প্রতিটি মানুষের নিজের আদর্শ অনুযায়ী ‘ব্যাখ্যা’ করার স্বাধীনতা সবার নিজ বিশ্বাসকে অন্ধ সমর্থন ও তা থেকে উদ্দীপ্ত চিন্তার মাঝে নিহিত।

এটা বর্তমানে খুব সাধারনণ জায়গা হয়ে গেছে ধরে নেয়ার জন্য যে ডানপন্থীরা পরিচয় কেন্দ্রিক রাজনীতি এবং এপিস্টেমিক আপেপোক্ষিকতা যেভাবে ব্যবহার করেছে অনেকটা উত্তর আধুনিক-বামদের মত করেই। অবশ্যই, ডানপন্থার মূল উপাদানগুলো সর্বদা বর্ণ, জেন্ডার ও লিঙ্গের ভিত্তিতে বিভাগ সৃষ্টি করার মতন এবং অযৌক্তিক এবং এন্টি-সায়েন্সের দিকেও পক্ষপাতী ছিল কিন্তু উত্তর আধুনিকতাবাদ এমন একটি সংস্কৃতি তৈরি করেছে যা এর তুলনায় আরও বেশি গ্রহনণযোগ্য। কেননা মালিক এই পরিবর্তনটি নিয়ে কথা বলেন।

যখন আমি আগে বলেছিলাম যে সাম্প্রতিক দশকগুলোতে মৌলবাদীদের দ্বারা যেসব ধারনাণা ব্যবহৃত হচ্ছেএর ভাবনাটি বিকল্প সত্যএর ধারনাণার ওপর অংকিতআমি বলছি না যে কেলায়েন কনওয়ে, অথবা স্টিভ ব্যানোন, অথবা তা বাদে ডোনাড ট্রাম্প, ফুকো অথবা বোদ্রিয়ার  পড়ছেনতার চেয়ে বরং বলা যায় এটি জ্ঞানজগতের এমন একটি অংশ যেটি বর্তমান দশকগুলোতে সত্য ও জ্ঞানের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিকে আপেক্ষিকতার সাথে মিশিয়ে দিয়েছে যা একদমই অবিপদজনক, এবং এভাবেই প্রগতিবিরুদ্ধ ডানদের জন্য কেবল সবকিছু পুনরায় শুদ্ধ করা তার সাথে প্রগতিবিরুদ্ধ চিন্তা আরও বর্ধিত করা সহজ করে দিয়েছে” [১২]

এই ‘চিন্তাধারার গুচ্ছ’ আমাদের আলোকময়তারও আগের সময়ে ফেরত যাবার হুমকি দেয়, যখন ‘যুক্তি’ বিশ্বাসের থেকে কেবল কম না, পাপ বলেও ধরে নেয়া হত। জেমস কে. এ. স্মিথ, শুদ্ধ একজন ধর্মতত্ত্ববিদ এবং দর্শনের প্রফেসর, চটজলদিই খ্রিষ্টধর্মের সুবিধা ধরে ফেলতে পেরেছিলেন এবং উত্তর আধুনিকতাবাদ সম্পর্কে বলেন, “অন্য কোনো সত্ত্বার পাঠানো তাজা বাতাস যা চার্চের কংকালগুলোকে পুনরায় পুনরুজ্জীবিত করেছে।” (পৃ ১৮)। হুস এফরেইড অফ পোস্টমর্ডানিজম?: টেকিং দেরিদা, লিওটার, এ্যন্ড ফুকো টু চার্চ বইতে তিনি বলেছেন,

উত্তর আধুনিকতাবাদের সাথে একটি চিন্তাশীল যোগাযোগ আমাদের পেছনে তাকাতে উদ্বুদ্ধ করবে৷ আমরা দেখব যে উত্তর আধুনিক দর্শন বলে যাকে একই কাতারে ফেলে দেয়া যায় তার একটি চোখ আছে প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় সূত্রসমুহের দিকে এবং তা গঠন প্রাকআধুনিক গোছের জানা, বাঁচা, এবং কাজ করার পদ্ধতির সার্থক মুক্তি দিয়েছে” (প ২৫)

এবং

উত্তর আধুনিকতাবাদ চার্চের জন্যে তাদের বিশ্বাস  পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবার লক্ষ্যে একটি প্রভাবক হতে পারে, নিরপেক্ষ যুক্তি দ্বারা শাসিত সত্যের কোনো গঠনতন্ত্র না, বরং একটি গল্পের মাধ্যমে যেখানে কিনা দেখতে চোখ ও শুনতে কান প্রয়োজন” (প ১২৫

আমরা যারা বামে আছি তাদের এ নিয়ে ভীত থাকা উচিত যে “আমাদের পক্ষ” থেকে কি তৈরি করা হয়েছে। অবশ্যই, আজকের সমাজের সব সমস্যা উত্তর আধুনিকতাবাদের তৈরি না, এবং তা দাবী করে কোনো লাভও হবে না। ইউএস এ পপুলিজম ও জাতীয়তাবাদের উন্মেষও ডানপন্থীদের শক্তিশালী হয়ে টিকে থাকার ফল এবং ইসলাম নিয়ে ভয় তৈরি হয়েছে শরনার্থী সমস্যা থেকে। অটলভাবে ‘এন্টি-এসজেডব্লিউ’ (anti-SJW) মনোভাব ধারণ করে এবং সবকিছুর দোষ বামপন্থার উপরে দেয়াটাই হল বর্তমানে বহুল প্রচলিত নিজের জ্ঞানের ওপর পক্ষপাতিত্ব ও তার দ্বারা উদ্দীপ্ত হয়ে বিচার করার উদাহারণ। সুদূর ডানপন্থা অথবা ধর্মীয় ডানপন্থা অথবা ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদ এসব কিছু উৎপাদনের দায় বামপন্থার না, কিন্তু যৌক্তিক উদ্বেগকে যুক্তিসঙ্গতভাবে জড়িত না করা এবং এর দ্বারা যুক্তিযুক্তদের সমর্থন করে তাদেরকে আরও শক্তিশালী করার জন্য এটি দায়বদ্ধ। এটা দায়ী তার নিজস্ব ভাগ বিভাগ তৈরি হওয়া, শুদ্ধতার প্রশ্ন ওঠা, আরও বিভাজিত হবার কামনা যেসব ডানপন্থাকে তুলনামূলক সুসংগত ও সংযোগশীল বলে মনে করানোর জন্যে।

বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য, বামপন্থীদের প্রয়োজন একটি মজবুত, সুসংগত (coherent) এবং যৌক্তিক উদারনৈতিকতা তৈরি করার। এটা করতে আমাদের উত্তর আধুনিক-বামের ডিসকোর্সকে বিপরীতে চালিত করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধ দল, ভাগ বাটোয়ারা ও ক্রমোচ্চ শ্রেণিভাগের সাথে আমাদের মুখোমুখি হতে হবে স্বাধীনতা, সমতা এবং ন্যায়ের সার্বজনীন নীতিগুলো হাতে নিয়ে। উদারনৈতিক মন্ত্রের এখানে অবশ্যই একটও দৃঢ়তা রয়েছে বর্ন, জেন্ডার ও সেক্সুয়ালিটির ভিত্তিতে মানুষের শ্রেনিবিভাগের চেষ্টার বিপরীতে। আমাদের মানুষজনকে, যারা এ জাতীয় চিন্তা পোষণ করে তাদের “বর্ণবাদী”, “সেক্সিস্ট” অথবা “হোমোফোবিক” ইত্যাদিদী ডেকে এবং তাদের শাব্দিক অত্যাচার করবার ইচ্ছা আছে এরকম অভিযোগ না তুলে, অবশ্যই অভিবাসন, গ্লোবালিজম এবং স্বৈরাচারী পরিচয় কেন্দ্রিক রাজনীতির বর্তমানে ডানপন্থার মাঝে খুব ক্ষমতায়িত হওয়ার দিকটির ব্যাপারে যে চিন্তা তা প্রকাশ করতে হবে। ডানপন্থীদের মাঝে যে স্বৈরাচারী অংশটি আদতেই বর্ণবাদী, সেক্সিস্ট এবং হোমোফোবিক তাদের বিরুদ্ধে আমরা এগুলো করেই টিকে থাকতে পারব, তাছাড়া এখন আমরা যা করতে পারি তা হল উত্তর আধুনিকতাবাদের একটি যৌক্তিক বিরুদ্ধ দলের ভাঁওতাবাজির পেছনে লুকিয়ে বসে থাকা।

বাম বনাম ডান নিয়ে আলোচনা আমাদের বর্তমান সমস্যা না বরঞ্চ সমস্যা হল ঐক্য, যুক্তি, নম্রতা (humility) এবং সার্বজনীন উদারনৈতিকতা (universal liberalism) বনাম অনৈক্য, অযৌক্তিকতা, অনুরাগপ্রবন নিশ্চয়তা এবং বর্গীয় স্বৈরচারীতা। স্বাধীনতা, সমতা এবং ন্যায় এর ভবিষ্যৎ দেখতে সমানভাবেই বিবর্ণ হোক সে জয় যারই, উত্তর আধুনিক বাম অথবা উত্তর-সত্য (post-truth) ডান। আমাদের মাঝে যারা উদারনৈতিক গনতন্ত্রকে মূল্যবান মনে করি তাদের এবং আলোকময়তা ও বৈজ্ঞানিক বিপ্লব ও আধুনিকতা নিজেরই এ সমস্যার আরও ভালো সমাধান দেয়া প্রয়োজন।

Notes

[1] The Order of Things: An Archaeology of the Human Sciences (2011) Routledge. p183

[2] ‘About the Beginning of the Hermeneutics of the Self: Two Lectures at Dartmouth.’ Political Theory, 21, 198-227

[3] Postmodernism: A Very Short Introduction. (2002) Oxford University Press. p49

[4] The Chomsky – Foucault Debate: On Human Nature (2006) The New Press. P41

[5] http://hydra.humanities.uci.edu/derrida/sec.html

[6] Positions. (1981) University of Chicago Press p41

[7] http://hotair.com/archives/2017/03/10/is-intersectionality-a-religion/

[8] Challenging Postmodernism: Philosophy and the Politics of Truth (2003) Prometheus Press. p 26.

[9] In Sullivan http://hotair.com/archives/2017/03/10/is-intersectionality-a-religion/

[10]  http://dailycaller.com/2017/01/30/anti-trump-march-for-science-maintains-that-racism-ableism-and-native-rights-are-scientific-issues/#ixzz4bPD4TA1o

[11] http://blogs.spectator.co.uk/2016/10/science-must-fall-time-decolonise-science/

[12] https://kenanmalik.wordpress.com/2017/02/05/not-post-truth-as-too-many-truths/

তরজমা: Sayeeda Meher A. Shaonlee is an undergraduate student in the Department of Anthropology, Jahangirnagar University. She believes that morality is the first philosophy, taking action is necessary no matter how trivial the issue is. She is not nihilistic but sometimes feels out of place.

হেলেন প্লাকরোজ মানবিক শাখারা একজন গবেষক যার মূল দৃষ্টি নারী সম্পর্কিত ও নারীদের জন্যে লেখা শেষ মধ্যযুগীয়/ নব্য আধুনিক ধর্মীয় লেখালেখির ওপর। তিনি উত্তর আধুনিকতাবাদের ও সাংস্কৃতিক বিনির্মানবাদের একজন সমালোচক যা তিনি মনে করেন বর্তমানে মানবিক শাখাকে শাসন করছে। টুইটারে যুক্ত হতে পারেন।@HPluckrose

 

0 Shares

Leave A Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven + eight =