নৃবিজ্ঞানে ‘মাঠ’ বা মাঠকর্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ আদিকল্প (আর্কিটাইপ)। ধরে নেয়া হয়, নৃবিজ্ঞানের গবেষণার বিষয়বস্তু হবে দূরের কোন দেশে, বা প্রত্যন্ত কোন দ্বীপে অথবা নিদেনপক্ষে নিজ সমাজের বাহিরে তথাকথিত কোন ‘আদিম’ সমাজে। এই আদিকল্পটি বেশ পুরানো, একেবারে প্রাতিষ্ঠানিক নৃবিজ্ঞানের শুরুর দিককার তাত্ত্বিক গুরু ম্যালিনস্কির (১৮৮৪-১৯৪২) হাতেই এই ধারণাটির স্বাভাবিকীকরণ হয়েছে। এর ফলে বহু দশক পরে বাংলাদেশে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসরে নৃবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠিত হল, সেই আদিকল্পের নানা মাত্রিক ব্যবহার আমরা দেখলাম। বিশেষত: তৃতীয় বিশ্বের সমাজ হিসাবে উন্নয়নের তাবৎ পরীক্ষা নিরীক্ষার উর্বর ক্ষেত্র যখন বাংলাদেশ, তখন উন্নয়ন, নৃবিজ্ঞান এবং ‘মাঠ’ এর ধারণা এখানে নতুন করে এক সূত্রে গাথা হয়ে যায়।

ধরে নেয়া হলো, আসল বা ‘খাঁটি’ নৃবিজ্ঞান মানে গ্রামের কৃষকদের মাঝে গবেষণা করা, বা নদী ভাঙ্গন অঞ্চলের মানুষের জীবনের উপর গবেষণা করা ইত্যাদি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কোন বিভাগতো এই পুরানো এবং উপনিবেশিক আমলের আদিকল্পটি হরেদরে প্রয়োগ করতে শুরু করলো বাংলাদেশের বাঙালি ভিন্ন অপরাপর জনগোষ্ঠীর উপর। তো সেই সব গবেষণার গুনগত মানের বিষয়তো আছেই। রয়েছে তাত্ত্বিক কিছু প্রশ্ন।
এই সব কিছু সমেত বাংলদেশে প্রাতিষ্ঠানিক নৃবিজ্ঞান চর্চার প্রায় তিনটি দশক হতে চললো।

প্রসঙ্গত: নৃবিজ্ঞান যখন আমদের দেশে একটি বিদ্যায়তনিক শাস্ত্র (একাডেমিক ডিসিপ্লিন) হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে (গত শতাব্দীর মধ্য ৮০র দশকে) ততদিনে পশ্চিমের কোন কোন জায়গায় নৃবিজ্ঞান শাস্ত্রটির অবিচুয়ারি লেখার কাজ চলছে (উপনিবেশ নাই, নৃবিজ্ঞান চর্চা করি কীভাবে?)। আবার অন্যদিকে পশ্চিমেই নৃবিজ্ঞানীরা ইতিহাস সচেতনতার জায়গা থেকে দেখিয়েছেন কীভাবে শাস্ত্র হিসাবে নৃবিজ্ঞানও উপনিবেশের দায় এড়াতে পারেনা (পশ্চিমেই অনেক নৃবিজ্ঞানীর প্রিয় কাজ ইভানস প্রিচার্ডের মতো নৃবিজ্ঞানীদের হাত যে রক্তমাখা সেটা বার বার মনে করিয়ে দেয়া!)। এরকম পরিস্থিতিতে বাংলদেশে এই নানাবিধ আদিকল্প সমেত নৃবিজ্ঞানের চেহারাটি কেমন হলো বা নৃবৈজ্ঞানিক সাহিত্যের আদলটি কেমন দাঁড়ালো তার একটা হিসাব নিকাশের সময় এসেছে। আর সেই দায়বোধ থেকেই এই ব্লগ করবার চিন্তা।

ভাবনাটা খুব সাধারণ। একটি উত্তর-উপনিবেশিক অঞ্চলে নৃবিজ্ঞান শাস্ত্রটির বিকাশের ধারাটি কেমন? তাত্ত্বিক ভাবে কোন বিষয়গুলো গুরুত্ব পাচ্ছে? পদ্ধতিতত্ত্ব (মেথডলজি) নিয়ে কী ভাবা হচ্ছে? মোটা দাগে বাংলাদেশের মত একটি উত্তর উপনিবেশিক রাষ্ট্রে নৃবিজ্ঞান চর্চার ধরনটি বিশেষ কোন চেহারা নিয়ে দাঁড়াচ্ছে কি? মোটা দাগে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হবে এই খোলা-উৎস ওয়েবজিনে।

উদ্যোগটি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত নয়। বরং একেবারে কিছু মানুষের ব্যক্তিগত আগ্রহকে একটি যৌথতার আকার দিয়ে আমরা হাজির হতে চেষ্টা করছি ভার্চুয়াল জগতে। ওয়েবজিনের বিভিন্ন বিভাগে লিখবেন এর পাঠকরাই, যারা নৃবিজ্ঞানে উৎসাহী, যারা নৃবিজ্ঞানে পাশ করে বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছেন, যারা নৃবিজ্ঞানের বই পত্র পড়তে ভালবাসেন। যে কেউ লেখা পাঠাতে পারেন। লেখাপত্র ছাপানোর জন্য আপনার নৃবিজ্ঞানী হবার দরকার নেই!

ভাল লেখা, সাক্ষাৎকার বা  অন্য যেকোন ভুক্তির ক্ষেত্রে নানা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের এখানে অগ্রাধিকার দেবার ইচ্ছা আমাদের।


সম্পাদক 
মাহমুদুল সুমন  

সম্পাদনা দল  
সাঈদ ফেরদৌস 
সায়েমা খাতুন 
রেবেকা প্রেন্টিস 

আর্ট ও আউটরিচ 
নাজনীন শিফা 

ওয়েব ও গ্রাফিক্স 
আরিফ রেজা মাহমুদ 
মু: আশিক ই সাদাতিয়া সুমন 
পিটার বিশ্বজিত মন্ডল 

প্রকাশক